ভোটে ইভিএম: রাজনীতিতে নতুন সংকট!

২৫ আগস্ট,২০২২

ভোটে ইভিএমঃ রাজনীতিতে নতুন সংকট!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আরটিএনএন
ঢাকাঃ জাতীয় সংসদের সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের অভিমত-ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক ও আস্থাহীনতা রয়েছে। নির্বাচন হবে অন্তত এক বছর তিন মাস পর। এর মধ্যেই ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে নতুন সংকট তৈরি করল ইসি। এমনকি ইসির এ সিদ্ধান্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। এমনকি দেশে আর্থিক সংকটের মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইভিএম কেনার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। খভর যুগান্তরের

তবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন কম উঠবে বলে মনে করেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক এবং নির্বাচন কমিশনের ইভিএম কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সভায় আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত মুখ্য বিবেচনায় ছিল না। কীভাবে ভোট করলে সুষ্ঠু ও স্বাচ্ছন্দ্য হতে পারে এবং ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, সেটাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচনায় ছিল। প্রসঙ্গত, ইসির সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করেছিল।

ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচনকে এখনই বিতর্কিত করে দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সুযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, সংলাপে প্রায় সবাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। এখন নির্বাচন কমিশন বলছেন কে এলো, আর কে এলো না, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তাহলে ওই সংলাপ করে কী লাভ হলো? তাদের পদক্ষেপ ও বক্তব্যই পরিষ্কার করে দিচ্ছে সামনের নির্বাচন কেমন হতে পারে।

সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, কথা ছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন ইসির ওপর মানুষের আস্থাহীনতা ও হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দল, ভোটার ও সাধারণ মানুষের আস্থা না থাকলে তাদের কার্যক্রমের ওপর আস্থা আসবে কী করে?

ইসির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও নির্বাচনি সংকট প্রকট করবে বলে আশঙ্কা সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সংকট আরও বাড়াল। সেখান থেকে নির্বাচনি সংকট আরও ঘনীভ‚ত হলো। তাদের এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থাহীনতা প্রকট করল। আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হলো; যেটা জাতির জীবনে নতুন সংকট তৈরি করবে। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ইভিএম থেকে সরে আসছে। আর আমরা ইভিএমে ধাবিত হচ্ছি। সিইসি কি নিশ্চিত বলতে পারবেন এই ইভিএম দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষে মানুষের প্রকৃত রায় ফলাফলে প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন। এই নিশ্চয়তা শুধু ইসি কেন, কেউ দিতে পারবে না।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইভিএম দুর্বল যন্ত্র। এ মেশিনে পেপার অডিট ট্রায়াল নেই। এসব কারণে এ মেশিনের ওপর আস্থার সংকট আগ থেকেই রয়েছে। এ মেশিনেই ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে ওই আস্থার সংকট আরও দৃঢ় করল ইসি।

দেশে আর্থিক সংকট চলাবস্থায় ইভিএম কেনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন ও আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। দেশের বিদ্যমান আর্থিক সংকটের মধ্যে নতুন ইভিএম কেনার উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইসি ইভিএম কেনার প্রকল্প নেওয়ার কথা বলছে। দেশে এমনিতে আর্থিক সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এসব মেশিন কিনে কেন অনাস্থার জায়গা তৈরি করছে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, ইভিএম যতই ত্র“টিমুক্ত হোক না কেন, এ মেশিনের ওপর বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও মানুষের আস্থা নেই। এছাড়া ভোটের এত আগেই এ ঘোষণার কারণে ইসির ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে গেলে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা ইসির পক্ষে দুরূহ হবে।

ইসি তা বুঝেশুনে এগোচ্ছে বলে আমার কাছে প্রতীয়মান নয়। তিনি আরও বলেন, দেশে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে জাতীয় সংকট আরও প্রকট হবে। এর চেয়ে বড় সংকট আর কিছু হতে পারে না।

তবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন কম উঠবে বলে মনে করেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট হলে আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ঘটবে না। একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না। ফলে জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা কমবে।

নির্বাচন কমিশনের ইভিএম কারিগরি কমিটির অন্যতম এ সদস্য বলেন, দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট নিতে হলে আরও দুই লাখের বেশি ইভিএম দরকার হবে। কমিশন এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করলে দেড়শ আসনে এ মেশিনে ভোট নেওয়া সম্ভব।

মন্তব্য

মতামত দিন

রাজনীতি পাতার আরো খবর

৪৫০ কেন্দ্রের ফল: এগিয়ে জায়েদা খাতুন

নিজস্ব প্রতিবেদকআরটিএনএনঢাকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫০টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফল ঘো . . . বিস্তারিত

ইভিএমের ইন্টারনাল মেকানিজমে হেরেছি: তৈমুর

নিজস্ব প্রতিবেদকআরটিএনএনঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, ইলেক . . . বিস্তারিত

 

 

 

 

 

 

ফোন: +৮৮০-২-৮৩১২৮৫৭, +৮৮০-২-৮৩১১৫৮৬, ফ্যাক্স: +৮৮০-২-৮৩১১৫৮৬, নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০-১৬৭৪৭৫৭৮০২; ই-মেইল: rtnnimage@gmail.com