রাজধানীর নতুন আতঙ্ক ‘ভবন বিস্ফোরণ’

০৮ মার্চ,২০২৩

রাজধানীর নতুন আতঙ্ক ‘ভবন বিস্ফোরণ’

নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: রাজধানী ঢাকা শহরের ভবনগুলো যেন এখন টাইম বোমায় রূপান্তরিত হয়েছে। সিদ্দিক বাজারে ভবন বিস্ফোরণের তীব্রতা ও হতাহতে বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ে বিশ্লেষকেরা এই মন্তব্য করেছেন।

তারা বলছেন, ঢাকা শহরে পর পর দু’টি একই ধরনের ভবন বিস্ফোরণের ঘটনা রাজধানীতে নতুন দুর্যোগের আভাস দিচ্ছে। সব অনিয়ম এখন পুঞ্জিভূত হয়ে একটার পর একটা বিপর্যয় ঘটছে। এখন সামনে এসেছে গ্যাস, স্যুয়ারেজ এমনকি ওয়াসার পানির লাইন বিস্ফোরণ ইস্যু। এ ধরনে ঘটনা আরো ঘটবে বলে তাদের আশঙ্কা।

সিদ্দিক বাজারে মঙ্গলবারের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ১০০-এর বেশি। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর বিস্ফোরকবিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কোনো নাশকতামূলক বিস্ফোরক বা বিস্ফোরণের আলামত পায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বেসমেন্টে গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আলি আহমদ খান বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘সব কিছু দেখে, শুনে আমার মনে হয়েছে, এটা গ্যাসেরই বিস্ফোরণ। ওখানে অনেকগুলো গ্যাস লাইন আছে। একটি লাইন থেকে আরো লাইন নেয়া হয়েছে অবৈধভাবে। লাইনগুলো অনেক পুরাতন। ওখান থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। সামান্য কোনো স্পার্ক বা দাহ্য আগুন এই বিস্ফোরণ ঘটাতে সহায়তা করেছে হয়তো।’

তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এবং মগবাজারে একইভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। বাতাসে শতকরা পাঁচ ভাগ থেকে ১৭ ভাগ গ্যাস থাকলেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আর এর তীব্রতা নির্ভর করে যেখানে বিস্ফোরণ হয় ওই জায়গাটি কতটা বদ্ধ তার ওপর। সিদ্দিকবাজারে বেজমেন্টে বিস্ফোরণ তীব্রতা বাড়িয়েছে। খোলা থাকলে গ্যাস জমতে পারত না। বের হয়ে যেত।’

তিনি আরো বলেন, আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটবে। কারণ অনেক ভবন আছে, যেখানে অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস লাইন আছে।

ভয়াবহ বিস্ফোরণে তারা বিস্মিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম নুরুল আমিন বলেন, স্যুয়ারেজের লাইন থেকে মিথেন গ্যাস জমেও এ ধরনের বিস্ফোণ হতে পারে। তবে সিদ্দিক বাজারের ঘটনায় সেটা হয়নি। কারণ যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেখানে স্যুয়ারেজের লাইন থেকে গ্যাস আসার সুযোগ নেই। সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার ভবনে হয়তো হতে পারে। তবে দু’টি ঘটনায়ই বিস্ফোরণের যে ভয়াবহতা তা আমাকে অবাক করেছে। তাই গভীর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন যে আরো কোনো ইস্যু এই সব ঘটনায় আছে কিনা।

তিনি বলেন, আমরা সীতকুণ্ডে দেখেছি, ওখানে আরো সিলিন্ডার ছিল। ফলে ওগুলোও বিস্ফোরিত হয়ে বিস্ফোরণের তীব্রতা বেড়েছে। এখানে বিস্ফোরণের তীব্রতায় আমি বিস্মিত হয়েছি। তাই দেখা প্রয়োজন, তীব্রতা বাড়াতে আর কোনো উপাদান কাজ করেছে কি না।

কেন এত তীব্র বিস্ফোরণ
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরিচালক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘বিস্ফোরণের তীব্রতার কারণ হলো বিস্ফোরণটি বদ্ধ জায়গায় ঘটেছে। খোলামেলা জায়গায় হলে এতটা তীব্র হতো না। আমাদের অনেক মার্কেট এবং ভবন আছে, যেগুলো বদ্ধ। ঠিক মতো আলো বাতাস যায় না, ঘিঞ্জি। ফলে আতঙ্কের কারণ আছে।’

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হাসান মোহাম্মদ মোস্তফা আফরোজ বলেন, তিন কারণে সেখানে বিস্ফোরণ হতে পারে।
১. স্যুয়ারেজ লাইন লিক করে গ্যাস যখন ভবনের মধ্যে বদ্ধ জায়গায় জমতে থাকে, তখন সেখান থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। স্যুয়ারেজের গ্যাসের মধ্যে মিথেন ও হাইড্রোজেন সালফায়েড উভয়ই থাকে। এই দু’টি গ্যাসে আগুন ধরে যায়। এটা হতে পারে যখন বাসার ওয়াশরুমের কমোড বা বেসিনটা অনেক দিন ধরে ব্যবহার হচ্ছে না, তখন এটা ফ্ল্যাশ না হওয়ায় পাইপের মধ্যে পানি যাচ্ছে না। এর ফলে গ্যাস জমা হতে পারে। এভাবে কোনো ফ্লোরে বা কক্ষে অনেক দিন ধরে গ্যাস জমা হতে থাকলে বিস্ফোরণ হতে পারে।

২. তিতাস গ্যাসের লাইনে যদি লিকেজ থাকে, তাহলেও গ্যাস জমে আগুন ধরে যেতে পারে বা গ্যাসের পরিমাণ বেশি জমলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। মোট বাতাসের শতকরা পাঁচ ভাগ গ্যাস হলেই বিস্ফোরণ ঘটবে বা আগুন জ্বলবে। আমার মনে হয়, সিদ্দিক বাজারের ভবনটির বেজমেন্টে অনেক বেশি গ্যাস জমেছিল। তাই এত ভয়াবহ আকারে বিস্ফেরণ হয়েছে। সাধারণভাবে গ্যাস লিকেজের কারণে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে, এতে ভয়বহতা বেশি ছড়ায়।
৩. এসি থেকেও বিস্ফোরণ হয়। তবে সাধারণ কোনো কারণে এসি বিস্ফোরণ ঘটে না। মেকানিক যখন এসি মেরামত করে তখন অনেক সময় লিকেজ থেকে যায়। ওই লিকেজ থেকে এসির বিস্ফোরণ ঘটে থাকে।’

শহরে নতুন আতঙ্ক
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এখন শহরে এই প্ল্যাম্বার্স বিস্ফোরণ নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। ঢাকার শতকরা ৫৫ ভাগ ভবনই ঝুঁকির মধ্যে আছে। সেখানে না আছে অগ্নি নিরাপত্তা, না আছে এই ধরনের বিস্ফোরণ ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা। শুধু তিতাসের লাইন কেন, ওয়াসার লাইনেও গ্যাস জমে তা লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এজন্য রাজউক, তিতাস বা ওয়াসার কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। আর নগারিকেরাও উদাসীন। একটি এ্যাপার্টমেন্টের ইলেট্রিক সিস্টেম যাতে হয়তো একটি এসি চালানো সম্ভব। কিন্তু চালানো হচ্ছে পাঁচটি। চাপ না নিতে পেরে বিদ্যুতের লাইন জ্বলে যায়, এসি বিস্ফোরণ ঘটে।

আর বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ঢাকার ভবনগুলো যেন এখন টাইম বোমায় পরিণত হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপঘাত যেকোনো সময় হতে পারে। মাত্র ১০০ ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট আছে। এটা বিশ্বাস করা যায়! সব ধরনের ব্যবস্থা সঠিক থাকলে এই সার্টিফিকেট দেয়া হয়। আর পাঁচ বছর পর পর তা আবার চেক করে নতুন করে নিতে হয়। আসলে ভবনগুলো যাদের দেখার কথা, তারা দেখছেন না। আমার মনে হয়, প্রাইভেট সেক্টরকে এই দায়িত্ব দেয়া যায়।’

মন্তব্য

মতামত দিন

জাতীয় পাতার আরো খবর

পুলিশ প্রধান ও র‍্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী

নিজস্ব প্রতিবেদকআরটিএনএনঢাকা: গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্য . . . বিস্তারিত

কোনো নিয়মেই থামছে না ঘরমুখী মানুষের স্রোত

নিজস্ব প্রতিনিধিআরটিএনএনমুন্সীগঞ্জ: কোনো আইন-কানুনই আটকাতে পারছে না শিমুলিয়ার জনস্রোত। প্রশাসনের সকল কৌশল টপকিয়ে যাত্রীদ . . . বিস্তারিত

 

 

 

 

 

 

ফোন: +৮৮০-২-৮৩১২৮৫৭, +৮৮০-২-৮৩১১৫৮৬, ফ্যাক্স: +৮৮০-২-৮৩১১৫৮৬, নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০-১৬৭৪৭৫৭৮০২; ই-মেইল: rtnnimage@gmail.com