ঢাকার ৯ লাখ ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হচ্ছে

১৫ মার্চ,২০২৩

ঢাকার ৯ লাখ ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
আরটিএনএন
ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় নতুন ভবন করতে হলে এখন থেকে সাধারণ নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত নকশাও জমা দিতে হবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক)। আর ভূমিকম্প সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজউককে সহায়তার জন্য নতুন একটি সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে।

বুধবারের (১৫ মার্চ) এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন সংস্থাটি হবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং এটি পরিচালিত হবে মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে।

একই সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজউক দুটি টাস্কফোর্স গঠন করবে ঢাকার ভবনগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য। মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ভবনগুলো পরিদর্শন করা হবে যার তত্ত্বাবধানে থাকবে ওই দুই টাস্কফোর্স।

রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও মন্ত্রণালয় বা রাজউক আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভূমিকম্প বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী। তিনিও বিবিসি বাংলাকে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

‘নতুন সংস্থা গঠনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আজ হলো। এ সংস্থাই ভূমিকম্প সংশ্লিষ্ট সব বিষয় অর্থাৎ অ্যাসেসমেন্ট, মাটি পরীক্ষাসহ যাবতীয় কাজে রাজউককে সহায়তা করবে। আর রাজউক জানিয়েছে যে তারা এখন থেকে ভবন নির্মাণের জন্য সাধারণ নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত নকশাও বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

কাঠামোগত নকশা আসলে একটি ভবনের বিস্তারিত নকশা, যেখানে ফাউন্ডেশন, পিলার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ ভেতরের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কেমন হবে তার নকশাও থাকবে।

মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, এই নকশা থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে নতুন ভবনটি ভূমিকম্প সহনীয় হবে কি-না।

ভূমিকম্প ঝুঁকি এবং ঢাকায় সম্প্রতি কয়েকটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ছাড়াও সাম্প্রতিক এক জরিপে বিপুল সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তথ্য উঠে আসার প্রেক্ষাপটে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

থার্ড পার্টি যাচাই করবে বিদ্যমান ভবন
ঢাকা শহরের ভবনগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা হবে যে এগুলো কতটা নিয়ম মেনে করা হয়েছে বা ভূমিকম্প বা আগুনের ঝুঁকি থেকে এগুলো কতটা নিরাপদ।

তবে এগুলো কিভাবে করা হবে তা নিয়ে খুব শিগগিরই একটি নীতিমালা তৈরি হবে বলে জানিয়েছে রাজউক।

যদিও সম্প্রতি নগর উন্নয়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবনগুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হবে মূলত থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।

‘রাজউক বলেছে, নীতিমালা হওয়ার পর থার্ড পার্টি দিয়ে তারা কাজটি করবে। এটি হলে শহরের সব ভবন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। তখনই আমরা বলতে পারবো যে শহরটি আসলে কতটা ঝুঁকির মধ্য আছে।

উল্লেখ্য, রাজউকের হিসাবে এখন সংস্থাটির আওতায় থাকা এলাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন বা এ ধরনের স্থাপনা আছে।

সম্প্রতি প্রায় ৩০০০ ভবনের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে ৪২টি ভবনকে অতিমাত্রায় ঝুঁকিতে থাকার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা বলেন, এসব ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিভাবে ভাঙ্গা হবে সেটি রাজউক ঠিক করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে দু’মাস সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, সামনে রোজার পর এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, তবে তার আগে এসব ভবনের মালিকদের চিঠি দেয়া হবে। তারা ভবন খালি করে দেবে। এরপর ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু হবে।

ঝুঁকিতে ৯ লাখ ভবন
রাজউকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকার কাছে টাঙ্গাইল এলাকায় মাটির নিচে যে ফল্টলাইন আছে সেখানে সাত মাত্রার কাছাকাছি ভূমিকম্প হলে সাড়ে আট লাখেরও বেশি ভবন ধসে পড়বে।

সমীক্ষাটি গত চার বছর ধরে করা হয়েছে, যার রিপোর্ট সম্প্রতি কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে।

এ সমীক্ষার সাথেও জড়িত ছিলেন অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী। তিনি বলেন, এই সাড়ে আট বা নয় লাখের মধ্যে ছোটোখাটো ভবনও আছে।

‘আমরা সমীক্ষাটি করেছি আসলে নীতিনির্ধারকদের পরিস্থিতি ও এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। আজকের সভায় সেটি তাদের বলা হয়েছে। তারাও অনুধাবন করেছেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

আনসারী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে অনেক একতলা বা দোতলা ভবন আছে।

তবে সমীক্ষায় ৪২টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আগে থেকেই বলে আসছেন যে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের কাতারে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।

তবে ঘনবসতির এই শহরটির ঝুঁকি কমাতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তার বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখেনি।

আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং মিয়ানমার- এই তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান, যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

তবে সাধারণত প্রতিবারই কোনো ভূমিকম্প হওয়ার পরই ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়, যা ধামাচাপা পড়ে থাকে আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানার আগ পর্যন্ত।

এর আগে ২০০৯ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার যৌথ জরিপে জানা গিয়েছিল যে ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙ্গে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বরাবরই বলে আসছে যে ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এই অপরিকল্পিত ভবনগুলো সাথে সাথে ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেইসাথে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

তবে অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্প বিষয়ক নতুন সংস্থাটি তৈরি হলে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরোধী ব্যবস্থা কিংবা প্রশিক্ষণ সবকিছুই ওই সংস্থাটি দেখভাল করবে। ফলে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এটা আসলেই খুব জরুরি ছিল।

মন্তব্য

মতামত দিন

জাতীয় পাতার আরো খবর

পুলিশ প্রধান ও র‍্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী

নিজস্ব প্রতিবেদকআরটিএনএনঢাকা: গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্য . . . বিস্তারিত

কোনো নিয়মেই থামছে না ঘরমুখী মানুষের স্রোত

নিজস্ব প্রতিনিধিআরটিএনএনমুন্সীগঞ্জ: কোনো আইন-কানুনই আটকাতে পারছে না শিমুলিয়ার জনস্রোত। প্রশাসনের সকল কৌশল টপকিয়ে যাত্রীদ . . . বিস্তারিত

 

 

 

 

 

 

ফোন: +৮৮০-২-৮৩১২৮৫৭, +৮৮০-২-৮৩১১৫৮৬, ফ্যাক্স: +৮৮০-২-৮৩১১৫৮৬, নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০-১৬৭৪৭৫৭৮০২; ই-মেইল: rtnnimage@gmail.com