Image description

নিজস্ব প্রতিনিধি 
ঝালকাঠি : স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ পয়তাল্লিশ বছর বিএনপির রাজনীতি করার পর আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়েছে ঝালকাঠির স্থানীয় বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর এমন কর্মকাণ্ডে তারা যেমন ক্ষুব্ধ হয়েছেন তেমনি হতাশও হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বিএনপির স্বার্থে কাজ না করে তিনি নিজের আখের গুছিয়েছেন।

এদিকে শাহজাহান ওমরের হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর ও কাঠালিয়া ) সংসদীয় আসনে মনোনয়ন দাখিল করার পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের মাঝেও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও অনেকে তার সমালোচনা করেছেন। সব মিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে ঝালকাঠি-১ আসন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর। দলের মনোনয়ন নিয়ে পাঁচবার সংদস সদস্য ও একবার মন্ত্রী হয়েছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি যে কয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২০০৮ বাদে সব কয়টি নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। সবশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ শাহ জাহান ওমর। প্রভাবশালী এ নেতার ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বাইপাস মোড়ে উত্তম ভবনে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ছিল। তিনি দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন এখানে বসে। এখানটা নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকত। বিএনপির নেতাকর্মীদের ফেস্টুন-পোস্টারে সাজানো ছিল ভবনটি।

কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে পাল্টে যায় সব কিছু। হঠাৎ করে দল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগদান করায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু পরিণত হয়েছেন তিনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই কার্যালয় এখন শাহজাহান ওমরের নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে তার এই দল পরিবর্তনের বিষয় ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়ার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রন্তি দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গত রোববার সারা দেশে দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। তখন রাজাপুর-কাঁঠালিয়া নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে হঠাৎ বিএনপির এক নেতার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার খবর বিস্ময় তৈরি করেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় স্থানীয় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। শাহজাহান ওমরের এভাবে দল পাল্টানো মেনে নিতে পারছেন না। হঠাৎ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার খবর বিস্ময় তৈরি করেছে। এছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রয়া।

শাহজাহান ওমরের প্রার্থীতা নিয়ে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন তার বাসভবনে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা সংগঠন করি আদর্শিক কারণে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। শাহজাহান ওমর যদি দলের আদর্শ মেনে নির্বাচনে আসেন, তাহলে আমরা তার সাথে থাকব।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা এম মনিরুজ্জামান বলেন, শাহজাহান ওমরকে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন না। তাকে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।

ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের হাতে একসময় লাঞ্ছিত হওয়ার কথা জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, হঠাৎ প্রার্থী পরিবর্তন হওয়াটা দলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। তবে এখন দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য আমরা।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, শাহজাহান ওমরের এভাবে দল পাল্টানো মেনে নিতে পারছেন না । রাজাপুর উপজেলা বিএনপি শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

ঝালকাঠি-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো: এজাজুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনিরুজ্জামান মনিরসহ ১১ জন প্রার্থী ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেয়ার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতাকে। প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দী থাকার পর গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া এবং ঝালকাঠি-১ আসনে তাকে মনোনয়ন দেয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর।

শাহজাহান ওমরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা জেলা বিএনপির
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপি। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন এক ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ঝালকাঠি জেলা বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি আজ জঞ্জাল মুক্ত হয়েছে। শাহজাহান ওমর দলের জন্য কখনোই কাজ করেননি। ব্যক্তি সুবিধা পেতে দলে ছিলেন। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য থাকাকালে দলের পদ-পদবী ব্যবহার করে নানা ফায়দা লুটেছেন এবং সবসময় দলের মধ্যে বিভেদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। নৌকার মাঝি হওয়ায় ঝালকাঠিবাসী তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা ঝালকাঠি জেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো: রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দলের শত্রু আজ চিহ্নিত হয়েছে। দলের সাথে বেইমানি করায় নেতাকর্মীরা তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আরেক সদস্য (দফরের দায়িত্ব থাকা) অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মুবিন বলেন, দলের নেতাকর্মীদের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত করেছেন তিনি। ১৫ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে লড়াই সংগ্রামে দমন-পীড়নকারীদের নৌকার মাঝি হওয়ায় সব শ্রদ্ধা সম্মান বিসর্জিত হয়েছে।

এদিকে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার বাগরি এলাকার তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বক্তব্যে শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার তীব্র প্রতিবাদ এবং বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।