Image description

নিউজ ডেস্ক 
আরটিএনএন: ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় শিশুরা খুব অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময়ে সর্দি-জ্বর, কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস (শ্বাসকষ্ট), নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এর সাথে বিগত কয়েক বছর ধরে যোগ হয়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ার মতো নানা রোগ-বালাই। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীদের ভীড়।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে প্রতিদিনই অসুস্থ শিশুদের নিয়ে হাজির হচ্ছেন মা-বাবারা। শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি।

শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি তিন বছর বয়সী রুমাইসা। ছোট্ট সন্তানের মাথার পাশে বসে আছেন রুমাইসার মা-বাবা। অবুঝ শিশুটি বারবার হাতের ক্যানোলা দেখিয়ে মা-বাবাকে তার কষ্টের কথা জানাচ্ছে।

১৮ দিন বয়সী নবজাতক যার এখনো নামও রাখা হয়নি, সেই কন্যা শিশুটি শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। অনবরত কাশির সাথে নাক দিয়ে পানি পড়ছে তার। চারদিন আইসিইউতে থেকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসক। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে শিশুটি।

পাশের বেডে বারবার বমি করছে পাঁচ বছর বয়সী শিশু নাদিম। মা পরম যত্নে মুখ মুছে, মাথায় হাত বুলিয়ে সন্তানকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। নাদিমও ভুগছে ঠান্ডাজনিত সমস্যায়।

নাদিমের বাবা জানান, আগে থেকেই ঠান্ডাজনিত রোগের সমস্যা রয়েছে তার ছেলের। একটু শীত বাড়ার সাথে তার পুরনো সেই সমস্যাটি দেখা দেয়।

রুমাইসা আর নাদিমের মতো হাসপাতালে ভর্তি হবার মতো পরিস্থিতি সব শিশুর না হলেও শীতের এই মৌসুমে সব বয়সী শিশুদের বাড়তি সুরক্ষার প্রতি জোর দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বেগম।

তিনি জানান, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে নবজাতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী শিশুদের রোগ থেকে বাঁচাতে অবলম্বন করতে হবে বিশেষ সাবধানতা। নবজাতক শিশুরা যেহেতু বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল সেক্ষেত্রেও নবজাতকের মায়েদের ঠান্ডা লাগলে শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে। সে আশঙ্কা এড়াতে নবজাতকের মায়েদের ঠাণ্ডা খাবার এড়িয়ে গরম খাবার খেতে হবে। গোসলে ব্যবহার করতে হবে কুসুম গরম পানি। আর বিভিন্ন বয়সী শিশুদের শীতকালীন রোগ থেকে বাঁচাতে গরম কাপড় পরতে হবে, ধুলাবালি পরিষ্কার রাখতে হবে। মশার হাত থেকে বাঁচতে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি বিকেল বেলায় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হবে। সর্দি-কাশি, জ্বর তিন দিনের বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পুষ্টিবিদ ওয়ালিউর রহমান জানান, শীতের মৌসুমে শিশুদের রোগ বালাই থেকে দূরে রাখতে খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। ভাজাপোড়া, বাইরের কেনা চিপস, চকলেট, জুস এড়িয়ে প্রতিদিনের মেন্যুতে রাখতে হবে পুষ্টিকর খাবার। যেমন, দুধ, ডিম, গোশত, রঙিন শাক-সবজি, ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফল। সুষম খাবার শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। একই সাথে নিয়মিত খেলাধুলা, শারীরিক পরিশ্রম জরুরি।

রোগবালাই ছাড়াও শীতে দুর্ঘটনার প্রবণতাও বাড়ে। আমাদের দেশে শীতকালে গরম পানি গায়ে পড়ে পুড়ে যাওয়া এবং আগুন পোহাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার সংখ্যা অনেক। বাড়িতে পানি গরম করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, শিশুদের দূরে রাখতে হবে। কুয়াশার মধ্যে যানবাহন দুঘর্টনাও ঘটে। সে ক্ষেত্রেও সাবধানতা দরকার। শীত এলে বেড়ানো ও উৎসব অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। সতর্ক থাকলে নানা রকম অসুস্থতা ও দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

শীতকালীন অসুখ এড়িয়ে বছরের এ সময়কে শিশুদের জন্য আনন্দময় করে তুলতে বাড়তি যত্নের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।