Image description

আব্দুর রহমান

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দীর্ঘ গবেষণা, পর্যালোচনা এবং মতামতের ভিত্তিতে ২০২১ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর-এর ফলাফল যথাযথ মূল্যায়ন এবং বৈষম্য নিরসনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বাদ দিয়েছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

২০২২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসি নীতিমালাকে গুরুত্ব না দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালায় শিক্ষক হওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম জিপিএ ৪ সহ মোট জিপিএ ৮ দশমিক ৫ থাকতে হবে এবং বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪ সহ জিপিএ ৯ থাকতে হবে। যদি কোনও শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএইচসি পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৪ না পায় আর সে শিক্ষার্থী যদি ভবিষ্যতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনসহ ভালো মানের প্রবন্ধ/নিবন্ধ প্রকাশের যোগ্যতা প্রমাণ করেন তাহলে কেনো তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না? অথবা জিপিএ-৪ না পাওয়া শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিজ বিভাগে সিজিপিএ ৩.৮০/৩.৯০/৪.০০ পেয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন তাহলে কেনো তিনি শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন না?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের এ নীতিমালা বাস্তবতা বিবর্জিত। এ নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে ইউজিসি’র নীতিমালাকে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে একজন মেধাবী, পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন, মেধা তালিকায় প্রথম হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলের পরীক্ষার ফলাফল দেখা হয় না।

কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি’র শর্ত থাকা স্বাভাবিক কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষক নিয়োগের সময় এসএসসি ও এইচএসসি’র শর্ত কেনো? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময়ই একজন শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি’র যোগ্যতা যাচাই করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সময় তা আবার যাচাই করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। কেউ এসএসসি এবং এইচএসসিতে পৃথকভাবে ৩.৫০/৩.৭০/৩.৯০/ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর-এর মেধা তালিকায় প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়ার পরও কি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন মরে যাবে? এর চেয়ে বড় বৈষম্য কি হতে পারে?

আইনের দৃষ্টিতে তার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাভিয়েশনস অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি নীতিমালা অনুসরণ করে এসএসসি ও এইচএসসি বাদ দিয়ে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে।

বিগত সময়গুলোতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের মতো করে যোগ্যতা নির্ধারণ করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। এমনকি নিজেদের স্বজনদের নিয়োগ দিতে নিয়োগের যোগ্যতা শিথিল করেছে বলে ইউজিসির তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি নীতিমালা অনুসরণ না করে শিক্ষক নিয়োগ দিলে বিভিন্ন অনিয়ম ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে- যা যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যহীন ও যোগ্যতার মানদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য ইউজিসি নীতিমালা অনুসরণ করে এসএসসি ও এইচএসসি বাদ দিয়ে শুধু স্নাতক-স্নাতকোত্তর যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রার্থীর পিএইচডি ডিগ্রি ও ভালো মানের গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আমরা আশা করি এটা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গুণগত মান আরও বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যের অবসন হবে।

লেখক: আব্দুর রহমান, পিএইচডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়