Image description

নিজস্ব প্রতিনিধি
আরটিএনএন
গাজীপুর: গাজীপুরে সোমবার সকালে থেকে ২-৩টা কারখানা ছাড়া প্রায় সব পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। শ্রমিকরা দলেদলে তাদের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তবে এখনো খোলা হয়নি কোনাবাড়ী এলাকার প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস তুসুকা গ্রুপের পাঁচটি কারখানা।

বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকাল থেকেই কোনাবাড়ী ও আশপাশের এলাকায় থানা ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিজিবির সদস্যারাও পূর্বের ন্যায় তাদের সাজোয়া যান নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে টহল দিতে দেখা গেছে।

শিল্পপুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় সবচেয়ে বেশি শ্রমিকরা বিক্ষোভ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় কোনাবাড়ি এলাকায় তিনজন ও ভোগড়া এলাকায় একজন শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ী এলাকায় তুসুকা গ্রুপের পাঁচটি কারখানায় শ্রমিকরা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এতে তাদের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ওইদিন বিকালে কোনাবাড়ী ও আশপাশের প্রায় ১৭টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে রোববার-সোমবারের মধ্যে প্রায় সবকটি কারখানা খুলে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

শ্রমিকরাও আন্দোলন ছেড়ে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। শ্রমিকরা সকালে দল বেধে কাজে যোগ দিয়েছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সোমবারও শিল্প পুলিশ থানা পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর বাজার, মৌচাক, তেলিচালা, কোনাবাড়ী, জরুন ও ভোগাড় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। তাদের সঙ্গে বিজিবির সদস্যরাও টহল দিয়েছে।

মহানগরের কোনাবাড়ি জরুন এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের যে বেতন বাড়িয়েছে তা পরিপূর্ণ না হলেও মানিয়ে নিতে পারব।

তার অন্যান্য সহকর্মীরা বলেন, সর্বনিম্ন বেতন ২৩ হাজার টাকা হলে ভালো হতো। আমরা আন্দোলন করছি কিন্তু ভাঙচুরের সঙ্গে থাকতে চাই না। আমরা কাজে করে খেতে চাই।

এছাড়া একটি কারখানা জিএম মিজানুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলন করবে বিভিন্ন দাবি দাওয়া থাকবে সেগুলি চাইবে ভালো কথা। কিন্তু কারখানা ভাঙচুর করবে, কিছু হলেই মহাসড়ক অবরোধ করবে, পরিবেশ নষ্ট করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাজ না করলে বেতনও নেই। কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে পরিবেশ খারাপ হলে আবার বন্ধ করে দেওয়া হবে।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় কথা হয় শিল্প পুলিশের পরিদর্শক শাহ মো. হারুন বলেন, তুসুকা কারখানা ভাঙচুর হওয়ায় সেগুলি মেরামতের কাছ চলছে। কাজ শেষ হলে তারা হয়তো কারখানা চালু করবেন। এছাড়া আশপাশের সব কারখানায় রোববার সকাল থেকে কর্মমুখর রয়েছে। শ্রমিকরা শান্ত পরিবেশে কাজে যোগ দিয়েছেন।

উল্লেখ, গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে সরকারের মজুরি বোর্ড থেকে বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা ঘোষিত সেই বেতন প্রত্যাখ্যান করে আবারো বিক্ষোভ, কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটনায়। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শ্রমিকরা ১২৪টি কারখানায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। এ সংক্রান্তে বিভিন্ন থানায় ২৩টি মামলা এবং এসব মামলায় আজ পর্যন্ত ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।