Image description

নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন: পারিবারিক অনুষ্ঠানে মেয়ের মুখের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন মা অনন্যা। স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মেয়ের সামনেই কোনো একদিন কথা বলেছিলেন তিনি। নিজে ভুলেও গিয়েছিলেন সেই কথা। কিন্তু চার বছরের মেয়ে সবার সামনে সেদিনের কথাই যে বলে দেবে, তা ভাবতেও পারেননি তিনি। স্বাভাবিকভাবেই সবার সামনে অস্বস্তিতে পড়তে হয় অনন্যাকে।

অনন্যার মতো শিশুর আচরণ নিয়ে অনেক সময়ই ধন্দে পড়ে যান অভিভাবকরা। কখন কোন কথা, কোন জিনিস যে তারা শিখে ফেলে, বোঝা দায়! একই কথা বলছেন মনোবিদ ও সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ। তিনি বলেন, শিশুরা বাবা-মায়েদের দেখে শেখে। অনুকরণ করে। অভিভাবকের ভালো অভ্যাস ও আচরণ যেমন তাদের মধ্যে ইতিবাচক গুণের বিকাশ ঘটায়, তেমনই খারাপ অভ্যাসের প্রভাবও তাদের ওপরে পড়ে। সে কারণে দেখা যায়, মা-বাবার ভালো ও খারাপ— দুই আচরণই অজান্তে রপ্ত করে ফেলেছে আপনার সন্তান। এ মনোবিদ বলেন, শিশুর মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়তে হলে তাই বাবা-মায়ের আচরণে নজর দেওয়া দরকার। 

কীভাবে অভিভাবকরা সেই দায়িত্ব পালন করবেন, তা জেনে নিন—

নিজের কাজ নিজে করা

ছোট থেকেই নিজের কাজ নিজে করার শিক্ষা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন মনোবিদরা। তবে সেই শিক্ষা আলাদাভাবে তাকে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যদি ছোট থেকে বাবা, মা এবং বাড়ির অন্যদের সে একই ভূমিকায় দেখে। অনেক বাড়িতেই দেখা যায়, শুধু মা কাজ করছেন, বাকিরা তাকে ফরমাশ করছেন। আবার যে পরিবারে বাবা ও মা দুজনেই কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন, ঘরের কাজেও পুরুষরা হাত লাগান, তবে সেখানে সন্তান শিখবে— কাজ সবার জন্য, নিজেরটা নিজেকেই করতে হয়।

সম্মানের শিক্ষা

বাবা-মা বাড়ির অন্যদের সম্পর্কে কী ভাবেন ও কী বলেন, তা লক্ষ করে সন্তানরা। বাবা-মায়েরা যে ভাষা ব্যবহার করেন, তা-ই বলতে শেখে সন্তান। এ জন্য আলাদা করে শেখানোর প্রয়োজন হয় না। অভিভাবকরা যদি বাড়ির বড়দের সম্মান করেন, নিজেদের মধ্যে শান্তভাবে কথা বলেন, সেভাবেই কথা বলতে ও সম্মান করতে শিখবে সে। বাড়ির পরিচারক থেকে অতিথি, কার সঙ্গে অভিভাবক কেমন আচরণ করছেন, শিশুর শিক্ষায় এসব কিছুর প্রভাব পড়ে।

পড়াশোনা

জোর করে নয়, সন্তানকে পড়াশোনা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেওয়া যায় সহজভাবেই। খুদের পড়ার সময় যদি বাবা কিংবা মা নিজেও বই নিয়ে বসেন, তাকে গল্প বলে শোনান, তাহলে শিশু বুঝবে, পড়াশোনা করাটাও জরুরি। বাবা ও মাকে অবসরে বই পড়তে দেখলে, তারও কিন্তু বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাতে পারে।

অবসরযাপন

বর্তমান প্রজন্মের মোবাইলে আসক্তি বাড়ছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন মনোরোগ চিকিৎসক থেকে মনোবিদরা। মোহিত বলেন, সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু অভিভাবকদের থেকেই হতে পারে। সন্তানকে সময় না দিয়ে মা-বাবা মোবাইলে ডুবে থাকলে শিশু সেটাই শিখবে। সন্তানকে সংযত করতে হলে ছোট থেকেই অভিভাবকদের মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এর বদলে সেই সময় শিশুকে গল্পের ছলে জীবনের পাঠ দেওয়া যেতে পারে।