
রাবি প্রতিনিধি
আরটিএনএন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) প্রথম নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে, অন্যদিকে বিএনপিপন্থি অ্যালামনাসদের একাংশ নির্বাচন বর্জন করায় সংশয় তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে সাবেক এক ছাত্রদল নেতার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সেখানে রুয়া নির্বাচনে জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের নির্বাচন কমিটি ও নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের আহবান জানানো হয়। এছাড়াও নির্বাচন প্রতিরোধে ছাত্রদলের বর্তমান নেতাকর্মীদের মাঠে নেমে মিডিয়া প্রচারণা বাড়ানোর কথা বলা হয়।
এদিকে বুধবার দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া’র প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। এই অবস্থায় নির্ধারিত দিনে রুয়া’র নির্বাচন নিয়ে আরও সংশয় দেখা দিয়েছে।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়া’র প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. নুরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, উপাচার্য বরাবর পদত্যাগের আবেদন করেছি। কারও চাপে বা প্রভাবে নয়; আমি ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি।
অন্যদিকে গত ২২ তারিখে রুয়া’র গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করা হয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশনার বরাবর তফসিল বাতিলের আবেদন করেন সাবেক ছাত্রদলনেতা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সিদ্দীকি।
আবেদনে বলা হয়, ‘৯ মার্চ ২০২৫ খ্রি. পর্যন্ত যারা জীবন সদস্য হয়েছেন, তারাই কেবল গঠনতন্ত্রের ৩৬ (৪) ধারা মোতাবেক রুয়ার তফসিলে বর্ণিত নির্বাচনি ভোটার তালিকায় ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম যে, উক্ত তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন রুয়া’র জীবন সদস্য হয়েছেন তাদেরকেও তফসিল বর্ণিত রুয়া-এর নির্বাচনে ভোটার তালিকায় ভোটার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাহা স্পষ্ট রুয়া’র গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও পরিপন্থি।’
বর্জনের পর নির্বাচন বন্ধের জন্য রাবির মাদার বখশ হলের সাবেক ছাত্রদল নেতা আল আমীন সিদ্দিকীর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে করা একটি বার্তার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বার্তায় দাবি করা হয়, ‘রুয়া নির্বাচন বন্ধে যারা ভূমিকা রাখবে, বিএনপি সরকারে ক্ষমতায় এলে তাদের ক্যারিয়ার গঠন করে দেওয়া হবে’।
ওই বার্তায় আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন ও কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থি সদস্যদের পদত্যাগ করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভোট বর্জনের আহ্বান জানাতে হবে এবং উপাচার্যের চেয়ার ধরে টান দিতে হবে।’
এছাড়াও ওই পোস্টে নির্বাচন প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে ছাত্রদলের বর্তমান নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো ও মিডিয়া প্রচারণা বাড়ানোর কথা বলা হয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সাবেক ছাত্রদল নেতা আল আমীন সিদ্দিকীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে রাবি ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রুয়া’র গঠনতন্ত্র না মেনে এক প্রকার জবরদস্তি করে নির্বাচন দেওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য আমরা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে রুয়া নিয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম বলেন, আমরা সবাই চাই রুয়া’র নির্বাচনটা হোক। আমরা প্রশাসনকে বলেছি সবার অংশগ্রহণে আনন্দমুখর পরিবেশে রুয়া’র নির্বাচনের কথা। এক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে যারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে তাদেরকে সঙ্গে বসে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যারা এই সংগঠনে কন্ট্রিবিউট করতে পারবে সে যে আদর্শেরই হোক; আমরা তাদেরকেই নেতৃত্বে চাই।
নির্বাচন কমিশনের খসড়া প্রার্থী তালিকা থেকে জানা গেছে, বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক শিক্ষা সহ-উপদেষ্টা ড. আমিনুল ইসলাম এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদসহ আরও কয়েকজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক।
রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, ‘রুয়া’র প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে নাকি তারিখ পেছান হবে তা অ্যাডহক কমিটির জরুরি মিটিং ডেকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘এটাকে একটা দুরভিসন্ধি ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। অ্যালামনাসরা যে দায়িত্ব আমাদের ওপর দিয়েছে সেটা পালনের চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ওনাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এখানে আমাদের কোনো দুরভিসন্ধি নেই।’