Image description

নিজস্ব প্রতিবেদক 
আরটিএনএন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলে গাঁজা সেবনের অভিযোগে চারজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং অপর দু’জন অন্য হলের শিক্ষার্থী। আটক শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বহিরাগত দুইজনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া হলের আবাসিক দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে হল প্রশাসন।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শহীদুল্লাহ্ হলের প্রধান ভবনের ১০৪ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হলে উপস্থিত হন হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। তিনি জানান, কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা মাদক সেবনের বিষয়টি স্বীকার করেন।

আটককৃতদের মধ্যে শহীদুল্লাহ্ হলের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান শান্ত এবং রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ফয়সাল রয়েছেন। তারা দু’জনই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপর দুজন হলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হোসেন (স্যার এফ রহমান হল) এবং আইবিএর শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসীর। তারা দু’জনই ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

অভিযোগের ভিত্তিতে ১০৪ নং কক্ষে রুলিং পেপার, অধিকা পরিমাণে সিগারেটের খোসা ইত্যাদি পায় প্রক্টরিয়াল টিম ও হল প্রশাসন। সরেজমিনে গিয়ে একই ফ্লোরে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়। তাদের অভিযোগ, শহীদুল্লাহ হলের ১০৪ নম্বর কক্ষ থেকে প্রায়ই গাঁজার গন্ধ পাওয়া যায়। এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, ওই রুমে নিয়মিত মাদক সেবন করা হলেও এতদিন কেউ বিষয়টি প্রকাশ করেনি। পরে এক শিক্ষার্থী হল সংসদ ও হল প্রশাসনকে জানালে তারা সেখানে উপস্থিত হন। ঘটনাস্থলে একজন মাদক সেবনের কথা স্বীকার করে, যদিও বহিরাগতরা দাবি করে তারা সেদিন সকালেই সেখানে এসেছিল।

জানা যায়, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হোসেন মূলত স্যার এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী হলেও অবৈধভাবে শেখ মুজিব হলের ৭০২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সেখানে বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বহিরাগতদের এনে হলে মাদক সেবন করতেন। মুচলেকা দিয়ে ছাড়ার পরে তাকে একই কক্ষে থাকতে দেখা যায়। সিসিটিভি ফুটেজে আটক হওয়ার সময়ের পোশাকেই দুপুর ২টার দিকে তাকে শেখ মুজিব হলে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেখ মুজিব হলের ৭ম তলার এক শিক্ষার্থী বলেন, আব্দুল্লাহ ডাকসু নির্বাচনের আগে থেকেই আমাদের হলে আসতো। প্রায়ই আমি তাকে ৭০২২ নং রুমে ঢুকতে দেখছি। অনেক সময় ওই রুমে বিভিন্ন বহিরাগত ছেলেদের দেখা যেতো। তাকে মাঝে মাঝেই আমাদের হলের ছাদেও দেখছি। আব্দুল্লাহ দীর্ঘদিন থেকেই মাদকের সাথে জড়িত। কিন্তু ওই রুমে ও কার কাছে যেতো আমি জানিনা। এভাবে যদি অন্য হলের ছেলে এসে আমাদের হলে ঢুকে নেশা করে, তাহলে আমাদের পড়াশোনার পরিবেশটা থাকলো কোথায়? পড়াশোনার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং প্রশাসনের কাছে দাবি, যারা বহিরাগতদের আশ্রয় দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অভিযুক্ত হাসিবের নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আরেক অভিযুক্ত মেহেদী হাসান ফয়সাল বলেন, আমি এই রুমে থাকি না, এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ে থাকি। সকালে এই রুমে এসেছি। রুমে কোনো মাদক ছিল না বলে অস্বীকার করেন৷ 

অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ হোসেন বলেন, আমি লালবাগের একটি বাসায় থাকি। মিটারের বিদ্যুৎ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি বন্ধুর সাথে দুইজন মিলে সকাল ৫টার দিকে শহীদুল্লাহ্ হলে এসেছিলাম। কোনো মাদক সেবন করিনি। শেখ মুজিব হলে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আগে থাকতাম কিন্তু এখন থাকি না। আজকে (৩০ সেপ্টেম্বর) বিশ্রাম নেয়ার জন্য এসেছি।

হলের এজিএস ইব্রাহিম শিকদার বলেন, শহীদুল্লাহ্ হল সংসদ মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে আমরা হল প্রশাসনকে অবগত করি৷ প্রশাসন নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সকল শিক্ষার্থীদেরদেরকে মাদক থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কার্জন হল এলাকার সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, বহিরাগত দুই শিক্ষার্থী হলে থাকা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তারা মাদক সেবনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয় বলে দাবি করেছে। তবে রুমে মাদক সেবনের বিভিন্ন জিনিস পাওয়া গেছে।বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তাদের প্রক্টর অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাস্থলে তাদেরকে মাদক সেবনরত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তবে তাদের মধ্যে একজন স্বীকার করেছে গতকাল মাদক সেবন করেছে। হলে এ ধরনের কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি হলের নীতি ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘটনার পর প্রক্টোরিয়াল টিম দুজকে নিয়ে গেছে এবং আমার এক সহকর্মী তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আইডি কার্ডের ছবি ও নাম-ঠিকানাসহ সব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। নেক্সট মিটিংয়ে হল প্রভোস্টের নেতৃত্বে আলোচনা করে হলের দুই শিক্ষার্থীর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।