সুলতান আহমেদ রাহী
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের যুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ যুদ্ধের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছেন। আজ তার শুভ জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমান বগুড়া জেলার নশিপুর ইউনিয়নে বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মনসুর রহমান ছিলেন একজন বিশিষ্ট রসায়নবিদ ও মাতা জাহানারা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। জিয়াউর রহমান কলকাতা হেয়ার স্কুল ও করাচি একাডেমি থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫৩ সালে করাচি ডিজে কলেজে ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে। অ্যাডভান্সড মিলিটারি অ্যান্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান এবং কয়েক মাস ব্রিটিশ আর্মির সঙ্গেও কাজ করেন। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, মিরসরাই, রামগড়, ফেনী প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টরের ও জেড-ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে তিনি বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে রাষ্ট্রীয় বীর উত্তম খেতাব উপাধি পান।
তিনি প্রথম সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন এবং পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। রণনায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদদের কাছে সমাদৃত ও স্বীকৃত। শেখ মুজিবের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একদলীয় শাসন রহিতকরণের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য ও অর্থনীতি পুনর্নির্মাণ করার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার গ্রহণের জন্য জিয়াউর রহমানকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। তার ধর্মপরায়ন ইসলামিক মনোভাবের কারনে দেশের জনগণ সৎ শাসক হিসাবে অত্যন্ত ভালোবাসতেন।
জিয়াউর রহমানের সামরিক ও রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা যায়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা প্রবর্তন করে দেশের অর্থনীতির ভিত গড়ে দেওয়া, প্রতিরক্ষার জন্য শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন করা, খাল খনন, গ্রাম সরকার, কৃষির উন্নয়ন, গণশিক্ষা,১৯ দফা সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমের রাষ্ট্রের একটি গণচরিত্র গঠন করা, জনজীবনে নিয়মানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনা, দক্ষ ও কৌশলী আমলাতন্ত্র গড়ে তোলার উদ্যোগ, বেকারত্ব হ্রাস করা, শিল্পকারখানায় উৎপাদনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, মেয়েদের স্কুল ফুটবল শুরু করা, জাতীয় ক্রিকেট দল গঠন করা, চলচ্চিত্রে অনুদানপ্রথা চালু করা, একুশে ও স্বাধীনতা পদক প্রবর্তন করাসহ অনেক কিছু নিয়েই আলাপ-আলোচনা করা যায়।
১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেন।দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে, জিয়াউর তার শাসন সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে একটি আস্থা গণভোট করার ঘোষণা দেন। সে গণভোটে জিয়াউর রহমান ৯৮.৮৭% ভোট পেয়েছিলেন এবং জিয়াউর রহমান পরের বছরে একটি জনপ্রিয় ভোটের ঘোষণা দেন।
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছিল পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। জিয়াউর রহমান একজন যুদ্ধ-নায়ক,প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে ৭৭% ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে সূচিত দেশের উন্নয়ন ও জাতি গঠন কাজে বাংলাদেশের নারীদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯ দফার ১১ নম্বর দফায় নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদা নিশ্চিত করে এবং সমাজে তাদের যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। নারীর কল্যাণ ও তাদের অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীনে একটি নারীবিষয়ক দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সরকার ‘মহিলাবিষয়ক’ একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে। সকল সেক্টরে জিয়াউর রহমান এর নিজস্ব আধুনিক দর্শন ছিলো।শহীদ জিয়াউর রহমানের শিক্ষা দর্শন এবং তা বাস্তবায়নের তাঁর গৃহীত নীতি ও উদ্যোগ বাংলাদেশের জনমনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। তিনি স্বাধীন দেশের উপযোগী এবং উৎপাদনমূখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি “জাতীয় শিক্ষা ওয়ার্কসপ” আয়োজন করেন। এতে শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষাকর্মী এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন।
জিয়াউর রহমান প্রতিটি শিশুকে স্কুলে নেয়ার জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। তিনি দেশে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে গণগ্রন্থাগারের অসাধারণ ভূমিকার বিষয়টি উপলব্ধি করেই দেশের প্রতিটি থানায় একটা করে গণগ্রন্থাগার ও মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন।১৯৭৯ সালে ২ এপ্রিল জাতীয় সংসদে জিয়াউর রহমান বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষাকে “জাতির জন্য কল্যাণকর” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ কারণেই তিনি ১৯৭৬ সালে “জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা পরিষদ” গঠন করেন। জিয়াউর রহমান মনে করতেন গ্রামীণ ও পল্লী উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রয়োগ ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় উপযোগী প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রয়োগ ও ব্যবহার দরকার। আর এ জন্য তাঁর সরকার ‘পল্লী প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান’ গড়ে তোলেছিল।
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাই এ দেশের শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের সাংস্কৃতিক-মানসিক ও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশ বলে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড’ প্রতিষ্ঠা করেন।বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বয়স্ক প্রবীণ। তাদের অধিকাংশই অক্ষরজ্ঞানহীন। অথচ পুরো জাতিকে শিক্ষিত করে তোলা না গেলে জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নতির ধারা নিশ্চিত করা অসম্ভব বলে শহীদ জিয়াউর রহমান মনে করতেন। তিনি উপলব্ধি করলেন যে, সার্বিক জনগণকে জাতীয় চেতনায় সমৃদ্ধ করে তুলতে অক্ষরজ্ঞানের বিকল্প নেই। তাই তিনি ১৯৮০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী ‘গণশিক্ষা’ কার্যক্রম চালু করে ৪০ লক্ষের অধিক মানুষকে অক্ষরজ্ঞান লাভ করেন।এর ফলে নিরক্ষতার অভিশাপ থেকে অনেকাংশ মুক্তি পাওয়া যায়। শহীদ জিয়াউর রহমান নারী শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। শিক্ষিত নারীদের কর্মজীবী নারীতে রূপান্তরিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতে চাকরির শূন্য পদে নারীদের জন্য শতকরা ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
মেডিক্যাল কলেজসমূহের ২০ শতাংশ আসন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নারী পুলিশ সদস্য, আনসার ও গ্রাম সরকার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নারীদের নিয়োগের উদ্যোগ জিয়াউর রহমান প্রথম চালু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান চার বছরে শাসন আমলে শিক্ষা ক্ষেতে অবদান লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তেমনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের অবদান সাফল্যমন্ডিত।
সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি। বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া। সংবাদপত্রে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম ইত্যাদি প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের নির্দেশ প্রদান করেন। দক্ষ সাংবাদিক সৃষ্টির লক্ষে বিদেশ থেকে সাংবাদিক এনে প্রশিক্ষন ব্যবস্থা করা ও ১৯৭৭ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের নিজস্ব জায়গা হিসেবে বরাদ্দ দেন এবং নতুন ভবন নির্মাণ করেন। মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার অন্যতম নির্দশনস্বরূপ তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মান হিসেবে ‘একুশে পদক’ প্রদান প্রবর্তন করেন। দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব। সেচব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ৪০০০ এর অধিক খাল খনন ও পুনর্খনন করেন। গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান ও গ্রামোন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) গঠন করে গ্রামাঞ্চলে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি বন্ধ করা হয়। জিয়াউর রহমান শাসন আমলে হাজার হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষে জিয়াউর রহমান ২৭৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধিকরণ করেন। তিনি জনগনের কল্যানের জন্য মহাখালী নার্সিং কলেজ, জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল,পল্লীবিদ্যুৎ বোর্ড, আইসিডিডিআর,বি প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র যা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদে একটি আইন পাস করেন এবং ১৯৭৯ সালের ২৬ জুন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেই কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেছিলেন এবং কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য ১৪ জনের মধ্যে বিখ্যাত বিদেশি ১১ জন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছিলেন, এছাড়াও শিশু হাসপাতাল, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউট স্থাপন করেন। তিনি নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ এবং কলকারখানায় তিন শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করেন এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য রপ্তানির পর্যায়ে উন্নীতকরণ করেন। জিয়াউর রহমান যুব উন্নয়ন মন্ত্রাণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণ করেছিলেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে সকল মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ করেছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করেছিলেন। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণ এবং সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। জিয়াউর রহমান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসনলাভ করেছিলেন।
তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে 'সার্ক' প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বেসরকারি খাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিতকরণ করে জনশক্তি রপ্তানি, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যর রপ্তানির দ্বার উন্মোচন করেছিলেন। শিল্পখাতে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ করে ব্যাপক উন্নয়ন করেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল বাংলাদেশ নির্মানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশের কূটনৈতিক নীতিমালায় বিশেষ পরিবর্তন আনেন এবং আন্তর্জাতিক স্নায়ু যুদ্ধের পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেন ও পশ্চিমা ও মধ্যেপ্রাচের সাথে স্বাধীনতার পর থেকে যে শৈত্য বিরাজ করছিল সে সম্পর্ক তিনি বন্ধুসুলভ করেন এবং স্বাভাবিক করেন,ফলে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থলে পরিণত ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে তার রূপরেখা জিয়াউর রহমান রচনা করে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিয়াউর রহমান হলেন প্রথম বাংলাদেশি রাষ্ট্রপ্রধান যাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার হোয়াইট হাউসে ও যুক্তরাজ্য এলিসি প্যালেসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানের জন্য জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো -অপারেশনের চারটি স্থায়ী কমিটির একটি আল-কুদস কমিটির সদস্য হয়ে তিনি বিশ্ব নেতা হিসাবে পরিচিতি অর্জন করেন। জিয়াউর রহমান বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পু্নর্গঠনের কাজ অনেকটা ত্বরান্বিত করেছিলেন। এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সাথে উন্নত কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমানের আধুনিকীকরণও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আন্তজার্তিক ভাবে ইরান ইরাক যুদ্ধে ভূমিকা রেখে সূদৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করেছিলেন। ১৯৮০ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে আমন্ত্রিত বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি গিসকার্ড ডি'ইস্টাইং কর্তৃক ইলিসি প্রাসাদে আমন্ত্রিত হন ও দেশের উন্নয়নে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। জিয়াউর রহমানের শক্তিশালী অবস্থান ও কুটনৈতিক সফলতা জন্য মিয়ানমার ১৯৭৯ সালে ২০০০০০ রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়। তিনি ১৯৭৭ সালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন ও গ্রাম গুলিকে বিদ্যুতায়িত করেন। গ্রাম সরকার সকল স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কেন্দ্রীয় বিষয়, তাই জিয়াউর রহমান স্বনির্ভর গ্রাম সরকার কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন যাতে গ্রামবাসীরা খাদ্য উৎপাদন, গ্রামভিত্তিক সমবায় গঠন, গণসংযোগের মতো উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে পারে। জিয়াউর রহমান জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধে পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় স্থাপন করেন। ব্যক্তি উদ্যোগে শিল্প প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বর্তমান ঢাকা মহানগরের মতিঝিলে অবস্থিত শিল্পভবন নামক বহুতল দালানটি জিয়াউর রহমানের আমলেই করা। চট্টগ্রামে প্রথম ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পুনরায় চালু করেন। তার নেতৃত্বাধীন সরকার কমপক্ষে ১০টি সেক্টরকে বিজাতীয়করণ করে এবং কিছু শিল্পের মালিকানা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাছে হস্তান্তর এবং তহবিল দিয়ে তাদের সহায়তা করার বিধান চালু করেন এবং পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা ব্যবসায়ীদের ক্রেস্ট পুরস্কার প্রদান করেন। জিয়াউর রহমানকে কিছু মূল সংস্কারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয় যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজকে গঠন করেছিল। তার আমলে তৈরি পোশাক শিল্পের সূচনা হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন এনেছিল। এই সংস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যের উদারীকরণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, উদ্যোক্তাদের প্রচার যার ফলে রপ্তানি-নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধি।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক বন্ধ অর্থনীতি থেকে পুঁজিবাদী উদার অর্থনীতিতে রূপান্তরের সভাপতিত্ব করেন। জিয়াউর রহমান বিবিসি জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি আসন লাভ করেন। আমরা এই ৮৮ তম জন্মবার্ষিকীতে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের প্রার্থনা বাংলাদেশের স্থপতি, বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্ক্তা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আর্দশের জাতির পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম দান করুন লেখক: আহ্বায়ক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল
Comments