Image description

 ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
 আজ ৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ক্যানসার চিকিৎসায় সবার মাঝে সমতা ফিরিয়ে আনার ব্রত নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর ক্যানসার কন্ট্রোল অর্থাৎ ইউআইসিসি ২০২২-২০২৪ সাল পর্যন্ত ‘ক্লোজ দা কেয়ার গ্যাপ’ এই মূল মন্ত্রকে সামনে নিয়ে কাজ করে চলেছে। 

আমরা জানি প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষমতা রয়েছে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটানোর, হতে পারে সেটি ছোট অথবা বড়। কিন্তু সম্মিলিতভাবে যদি কাজ করা যায় তা হলে অনেক বড় কিছু করা সম্ভব। বিশেষত বিশ্ব ক্যানসার দিবস একটা দিবসের চাইতেও বেশি কিছু। এর মানে এই নয় যে, আমরা শুধুই সারা বছর এই একটা দিনই ক্যানসার চিকিৎসায় সবার মাঝে সমতা ফিরিয়ে আনার জন্য কথা বলব বা কাজ করে যাব। তিন বছর ধরে এই ক্যাম্পেইন চালানোর প্রধান কারণ হচ্ছে— বেশি বেশি মানুষকে এই ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করিয়ে নানা রকম বুদ্ধি পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে ক্যানসার চিকিৎসায় সমতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। 

২০২৪ সাল হচ্ছে— এই ক্যাম্পেইনের শেষ বর্ষ। শেষ বর্ষের স্লোগান হচ্ছে— ‘Together, we challenge those in power’। এ বছর যারা উচ্চপদস্থ, যারা সিদ্ধান্ত তৈরি করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের বছর। এ বছর যারা নেতৃত্বস্থানীয় রয়েছে, তাদের সংযুক্তিকরণের বছর। এ বছর আমরা সবাই মিলে আমাদের নেতৃত্বস্থানীয় যারা রয়েছেন, তাদের বোঝাবো যে আমরা চাই  চিকিৎসাকে যাতে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেওয়া হয়। এমন কোনো উদ্ভাবন করা হয়, যাতে আমরা ক্যানসার চিকিৎসায় সবার মাঝে সমতা ফিরিয়ে নিতে পারি এবং আমাদের আরও বেশি রিসোর্সকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটি ক্যানসারমুক্ত বিশ্ব করতে পারি। 

ক্যানসার চিকিৎসার অসমতার প্রধান কারণগুলোকে খুঁজে বের করে আমাদের নেতৃত্বস্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা সেগুলোকে কীভাবে দূরীভূত করতে পারি সে ব্যাপারে পরিকল্পনা করার বছর এটি। আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারের একার পক্ষেই এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্যানসারের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া কিংবা ক্যানসার চিকিৎসায় সবার মাঝে সমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কাজেই প্রতিটি জেলাভিত্তিক যে বিত্তবানরা রয়েছেন কিংবা নেতৃত্বস্থানীয় যারা রয়েছেন তারা যদি এগিয়ে আসেন,  হাতে হাত মিলিয়ে যদি ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তা হলেই কিন্তু আমরা একটি ক্যানসারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারি।

প্রতিটি জেলায় একটি আধুনিক ক্যানসার তথ্যকেন্দ্র থাকাটা খুব জরুরি। যে তথ্যকেন্দ্র থেকে মানুষ ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে, ক্যানসার ডায়াগনোসিস করতে গেলে যে পরীক্ষাগুলো করতে হয় সেগুলো সম্পর্কে ধারণা পাবে এবং এ পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো কোথায় কোথায় করা যেতে পারে সে সম্পর্কে জানতে পারবে। 

পাশাপাশি এই ক্যানসার কোন পর্যায়ে আছে, সেটি বোঝার জন্য কী ব্যবস্থা রয়েছে কিংবা এর চিকিৎসাগুলো কী বা চিকিৎসাগুলো নিতে গেলে কোথায় যেতে হবে, সেই ব্যাপারেও তথ্য নিতে পারবে। এতে একাধারে যেমন ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা বাড়বে অন্যদিকে মানুষের কাছে ক্যানসার চিকিৎসাটা সহজলভ্য হবে। ফলে বেশিরভাগ মানুষ আর চিকিৎসা না নিয়ে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়বে না। এ কথা সত্য যে, সবখানে সব ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র করে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু অন্তত ক্যানসার সংক্রান্ত তথ্যগুলো জানানোর ব্যবস্থা থাকাটা খুব জরুরি। তাই বিশ্ব ক্যানসার দিবসে আসুন আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই— আমরা আমাদের নিজ নিজ জেলায় ক্যানসার চিকিৎসা তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করব।

লেখক: ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা

সূত্র: যুগান্তর