Image description

কুবি প্রতিনিধি
আরটিএনএন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলার নেতৃত্ব দেয়া আট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

রোববার (২৮ এপ্রিল) রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহেরের দায়ের করা অভিযোগ ও প্রতিবেদকের হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে তাদের শনাক্ত করা হয়।

 অভিযোগপত্রে ড. তাহের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আসাদুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ ২০ জনের নামে থানায় অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের বাকি নেতারা হলেন আমিনুর রহমান বিশ্বাস (বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ), রেজা-ই- এলাহি (বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক), মাসুদ আলম (সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ), ইকবাল হোসাইন খান (ছাত্রলীগ কর্মী ও পদপ্রত্যাশী), পার্থ সরকার (ছাত্রলীগ কর্মী ও পদপ্রত্যাশী), বিপ্লব চন্দ্র দাস (সাবেক ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি, ইমরান হোসাইন (নজরুল হলের সাবেক সভাপতি), মুশফিকুর রহমান খান তানিম (ছাত্রলীগ কর্মী পদপ্রত্যাশী), রকিবুল হাসান রকি (কুবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), মেহেদি হৃদয় (নজরুল হল শাখার সাবেক সভাপতি), ফয়সাল হোসেন (ছাত্রলীগ কর্মী পদপ্রত্যাশী), এম নুর উদ্দিন হোসাইন, (সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও চাকরি প্রত্যাশী) অনুপম দাস বাধন (সাবেক ছাত্রলীগকর্মী ও চাকরি প্রত্যাশী) , আরিফুল হাসান খান বাপ্পী (সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও চাকরি প্রত্যাশী), ইমাম হোসাইন মাসুম (কুবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), রাকিব (বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ কর্মী), ও দ্বীপ চৌধুরী (ছাত্রলীগ কর্মী)।

অভিযোগে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনায় তিনি উল্লেখ করেন, গতকাল প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশের সময় ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মো: মুর্শেদ রায়হান-এর পেটে ঘুষি মারেন এবং পেছন দিক থেকে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। এরপর তার সাথে থাকা সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি মুর্শেদ রায়হান এর পেটে ঘুষি মেরে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বিবাদী কাজী ওমর সিদ্দিকী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: মোকাদ্দেস উল ইসলামের মুখে সজোরে ঘুষি মারেন। এরপর তারা সকলে মিলে মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে শারীরিক আঘাত করে। এ সময় অন্যান্য শিক্ষকরাও (অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, পরিসংখ্যান বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক ৬. আমান মাহবুব, গণিত বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান, মার্কেটিং বিভাগসহ আরো ২০ জন শিক্ষক) হামলার শিকার হন। ভিসি কার্যালয়ে ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো: আসাদুজ্জামান বহিরাগত সন্ত্রাসীদের শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে হামলা করা ও তালা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে মাননীয় ভিসি তার কক্ষে প্রবেশ করার পর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভিসি কক্ষ থেকে নিচে নেমে এসে শিক্ষক লাউঞ্জে হামলা করে এবং প্রশাসনিক ভবনের বাইরে অবস্থানরত শিক্ষকদের ওপর পুনরায় হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা এ পর্যায়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: শামিমুল ইসলামকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং উপর্যুপরি শারীরিক হামলা করে।

অভিযোগপত্রে তিনি আরো উল্লেখ করেন, পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক শামিমুল ইসলামসহ অন্যান্য আহত লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাকসুদুল করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা পুনরায় তাদের ওপর শারীরিক হামলা করে। এ সময় প্রক্টোরিয়াল বডি ও কতিপয় শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের নানাভাবে হুমকিধামকি প্রদান করেন ও শারীরিকভাবে আক্রমোদ্যত হন। পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসীরা জেল ফেরত হিসেবে দাবি করে শিক্ষকদের দেখে নেবার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এভাবে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও হুমকি-ধামকির ফলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনের ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর ভিসির কক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কিছু দাবি দাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে দু’জন কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সাবেক সদস্যরা শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন। এরই জেরে তিন দফা ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি সাত দফা দাবি জানিয়ে আসছিল শিক্ষক সমিতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিল শিক্ষকরা। সবশেষ, গত (২৮ এপ্রিল) ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরসহ ভিসিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষকদের কিল, ঘুষি ও ধাক্কা দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান দখলে নেন।